সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আদম ও হাওয়া (আ)-এর তওবা কবূল ও পরস্পর সাক্ষাৎ

আদম ও হাওয়া (আ)-এর তওবা কবূল ও পরস্পর সাক্ষাৎ চরণ দ্বীপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর আদম (আ) চল্লিশ বছর পর্যন্ত গুনাহ মার্জনার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে থাকেন। অন্য বর্ণনায় তিনশ বছরের কথা রয়েছে। তার কান্নাকাটির ফলে তার চোখের পানিতে নহর প্রবাহিত হয় এবং সে নহরের কিনারায় খেজুর, লবঙ্গ ও যায়ফল গাছের সৃষ্টি হয়। হাওয়া (আ)-এর চোখে পানি হতে মেহিন্দি, সুরমা ও সুগন্ধযুক্ত ঘাস…

আদম ও হাওয়া (আ)-এর তওবা কবূল ও পরস্পর সাক্ষাৎ

islamicthumb1

চরণ দ্বীপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর আদম (আ) চল্লিশ বছর পর্যন্ত গুনাহ মার্জনার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে থাকেন। অন্য বর্ণনায় তিনশ বছরের কথা রয়েছে। তার কান্নাকাটির ফলে তার চোখের পানিতে নহর প্রবাহিত হয় এবং সে নহরের কিনারায় খেজুর, লবঙ্গ ও যায়ফল গাছের সৃষ্টি হয়। হাওয়া (আ)-এর চোখে পানি হতে মেহিন্দি, সুরমা ও সুগন্ধযুক্ত ঘাস, সৃষ্টি হয় এবং চোখের পানির যে ফোটা নদীতে পড়ে তা হতে মারওয়ারীদ সৃষ্টি হয়, যেন তা হতে তার কণ্যাদের গহনা তৈরি করা যেতে পারে। একদিন হযরত আদম (আ)-এর নিকট হযরত জিবরাঈল (আ) বললেন, মৃত্যুর পূর্বে হজ্ব করে নিন। মৃত্যুর কথা শােনতেই আদম (আ) ঘাবড়ে যান এবং হজ্বের সংকল্প গ্রহণ করেন। হজে যাওয়ার পথে যেখানেই তার পা পড়েছে সেখানেই পরবর্তীকালে গ্রাম ও জনবসতি গড়ে উঠে। তিনি কাবা গৃহের নিকটবর্তী হতেই সব ফেরেশতা তাঁর নিকট এসে বলেন, হে আদম (আ)! দু হাজার বছর ধরে আমরা এ ঘরের তাওয়াফ করছি। তখন কাবার নাম ছিল বায়তুল মা’মুর। এ ঘরের সদর -অন্দর তখন খােলা এবং উপরে যবরজদের তাবু টানানাে ছিল। তাবুর টানাগুলাে ছিল স্বর্ণের। তাঁবুর সে পেরেকগুলােই আজকের দিনে কাবা ঘরের খুঁটি এবং হারাম শরীফের অংশ। হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রাণী শিকার করা হারাম। হযরত আদম (আ) আরাফাত ময়দানে জাবালে রহমতের উপর বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশে অবস্থান কালে দেখতে পান, হযরত হাওয়া (আ) জেদ্দার দিক থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে আসছেন। আদম (আ) ওঠে তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং সবাই অঝােরে কাঁদতে থাকেন। তাঁদের কান্নাকাটি দেখে আসমানের ফেরেশতারাও কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় আদম ও হাওয়া (আ) আসমানের দিকে তাকান। এ সময় আল্লাহ তাআলা তাদের দৃষ্টি থেকে পর্দা উঠিয়ে দিলে তাদের দৃষ্টি আল্লাহ্র আরশের ওপর গিয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন- উচ্চারণ : ফাতালাক্বক্বা-আ-দামু মির রব্বিহী কালিমা-তিন ফাতা-বা ‘আলাইহি ইন্নাহ্ হুওয়াত তাউয়াবুর রাহীম। অর্থ : “অতঃপর আদমকে তার প্রতিপালক কতিপয় বাক্য শিক্ষা দেন, এতে রব তাঁর প্রতি মনােযােগী হন, নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী ও দয়ালু। এ সময় হযরত আদম (আ) আরশের গাত্রে কালেমা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লেখা দেখতে পান। তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক তােমার নামের সাথে যে নাম সংযুক্ত রয়েছে সে নামের উসিলায় আমাকে মার্জনা কর। তখন হযরত জিবরাঈল (আ) এসে আদম (আ)-কে বলেন- হে আদম! আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি সালাম প্রেরণ করে বলছেন, যদি আপনি বেহেশতেই এ নাম (মুহাম্মদ)-কে উসিলারূপে গ্রহণ করতেন, তবে তিনি আপনাকে পৃথিবীতে পাঠাতেন না। বর্ণিত আছে, একদিন হযরত মূসা (আ) প্রার্থনা করছিলেন। তার দোয়ার মর্মার্থ হচ্ছে- হে আমার প্রতিপালক! বেহেশতে দেয়াল আছে কি নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন, বেহেশতে দেয়াল আছে। মূসা বললেন, হে আমার রব! বেহেশতে দারােয়ান আছে কি নেই। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করলেন, বেহেশতে দারােয়ান আছে। অতঃপর মূসা (আ) বললেন-হে আমার প্রতিপালক! ইবলীস বেহেশতে কিভাবে প্রবেশ করে আদম (আ)-কে ধােকা দিয়েছে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- হে মূসা! এটা আমার সিদ্ধান্তে নির্ধারিত বিষয়। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করাে না। এরূপ আমার ইচ্ছা ছিল। আদম (আ)-এর হজ্ব সম্পন্ন হলে আল্লাহ্ ইরশাদ করলেন, হে জিবরাঈল! আদমকে আরাফাত ময়দানের নিকটবর্তী একটি ময়দানে নিয়ে তােমার পালক আদমের পিঠে ঘােষে দাও। নির্দেশনুসারে জিবরাঈল (আ) আদম (আ)-এর পৃষ্ঠে স্বীয় পালক ঘােষে দিলে পৃষ্ঠদেশ থেকে তাঁর অগণিত বংশধর এমনভাবে বের হল যে, সমগ্র জগত তাঁর সন্তান-সন্ততিতে ভরে গেল। আদম (আ) জিজ্ঞেস করলেন-এরা কারা? জবাবে জিবরাঈল (আ) বললেন, এরা আপনার বংশধর আদম (আ) বললেন, এত অগণিত সৃষ্টির স্থান সংকুলান যমীনে কিভাবে হবে। আদম (আ) এরূপ প্রশ্নের সাথে সাথে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আওয়াজ এল-হে আদম! সে ব্যবস্থা আমি পূর্ব থেকেই ঠিক করে রেখেছি। আদম (আ) জিজ্ঞাসা করলেন- হে মহান রব সে ব্যবস্থা কি? আওয়াজ এল হে আদম! তােমার অগণিত বংশধরের কিছু সংখ্যক বাপের পৃষ্ঠে, কিছু সংখ্যক মায়ের উদরে, কিছু সংখ্যাক যমীনের ওপরে এবং কিছু সংখ্যক যমীনের নিচে রাখব। আদম (আ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন-হে আমার প্রতিপালক আমার বংশধররা কত ভাগে বিভক্ত হবে। আওয়াজ এল, হে আদম! তােমার আগণিত বংশধরদের কেউ মুমিন, কেউ কাফের, কেউ ধনী, কেউ নিঃস্ব গরীব, কেউ সুখী, কেউ দুঃখী হবে। আদম (আ) বললেন, হে বর! এদের সকলেই যদি সমান হত তবে কতই না উত্তম হত! আওয়াজ এল হে আদম! যে আমার শােকর করবে আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকব। আমি সুখী অবস্থাপন্নকে দুঃখ-বেদনাক্লিষ্ট, ধনীকে দরবেশ এবং গুনাহগারকে অনুগত করিনি, যাতে তারা। আমার শােকর করে। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা নির্দেশ দিলেন- আদমের বংশধর সকলে পূর্ব পশ্চিম শারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাও। তৎক্ষণাৎ সকলে শারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেল। এদের মধ্যে যারা আদমের ডান দিকে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সকলেই ছিল মু'মিন। ডান দিকে সকলের সামনের শারীতে মুহাম্মদ (স) এবং তাঁর পেছনে আম্বিয়ায়ে কেরাম সকলে দণ্ডায়মান ছিলেন। আদম (আ)-এর বাম দিকে যারা দাঁড়িয়েছিল তারা সবাই ছিল কাফের। এদের সামনের সারিতে ছিল প্রাতপিত্তশালী অহংকারাও দাম্ভিকরা। এরপর আল্লাহ্ পাক সকল রূহকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি তােমাদের রব নই।” তারা সকলে সমস্বরে বলে উঠল হাঁ, আপনিই আমাদের রব।” সকল রূহের এ স্বীকারােক্তি দেয়ার পর আল্লাহ বলেন-তােমরা সকলে তােমাদের রবের উদ্দেশে সিজদা কর, এ নির্দেশ পেয়ে যারা আদমের ডান দিকে দাঁড়িয়েছিল তারা সকলে সিজদায় পতিত হল, কিন্তু বাম দিকের কেউ সিজদায় পতিত হল না। আল্লাহ তাআলা পুনরায় নির্দেশ করলেন-তােমরা তােমাদের রবের উদ্দেশে সিজদা কর। এ নির্দেশের পর তাদের মধ্যকার কেউ সিজদা করল আর কেউ কেউ করল না। এ অবস্থা দেখে আদম (আ) বললেন, হে পরওয়ারদেগার! এ বিস্ময়কর ঘটনা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে শব্দ এল-হে আদম! যারা প্রথম আদেশে সেজদা করেছে। তারা মুমিন হয়ে জন্ম নেবে এবং মুমিন থেকেই মৃত্যুবরণ করবে। যারা প্রথম ও শেষ আদেশ। সিজদা করেনি তারা কাফের হয়ে জন্মাবে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করবে। যারা প্রথম নির্দেশে সিজদা করেছে কিন্তু দ্বিতীয় নির্দেশে করেনি, তারা মুমিন হয়ে জন্ম নেবে কিন্তু কাফের হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। যারা প্রথমে নির্দেশ সিজদা করেনি, দ্বিতীয় নির্দেশে করেছে, তারা কাফের হয়ে জন্ম গ্রহণ করবে, তবে মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বললেন-হে আদম! তােমার ডান দিকে অবস্থানকারী সবাই জান্নাতী। আর তােমার বাম দিকে অবস্থানকারী সকলে জাহান্নামী, হে আদম! তাদের আনুগত্যে যেমন আমার কোন লাভ নেই, তেমনি তাদের নাফরমানীতেও আমার কোন ক্ষতি নেই।

📃 আল্লাহ তুমি আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ (স) এর উসিলায় আমাদেরকে সরল পথ দেখাও যাদের তুমি নেয়ামত দান করেছ । তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল হয়েছে যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে । 😭😢 মুমিন বান্দা গণের মধ্যে সামিল/ প্রতিষ্ঠিত করো। আমিন!

islamicthumb1

!

islamicthumb2

প্রিয় ইভেন্টের কন্টেন-এ সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবনালেখ্য বিভিন্ন তাফসীর, হাদীস প্রকাশসহ এবং সমকালীন গ্রন্থের সাহায্যে চেষ্টা করেছি ইহুদীদের মিথ্যা প্রচারণা থেকে রক্ষা করতে। কতটুকু সফল হবো তা পাঠকদের সুবিবেচনার জন্য রইল। এ অধমের প্রচেষ্টার ফসল আলোচ্য (কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থ থেকে আলোচিত) কনটেন্ট দ্বারা পাঠক সমাজ যদি সামান্যতমও উপকৃত হয় তবেই আমার শ্রম সার্থক হবে। পরিশেষে, আল্লাহ আমাদের সকলকে আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবনী গ্রন্থ থেকে উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করুন। আমীন।

মূলঃ উর্দ্দূ কিতাবের সরল বঙ্গানুবাদ তাহের সুরাটী (ভারত)

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ

    নূরে মুহাম্মাদী (স) - সৃষ্টি তাঁর থেকে সকল মাখলুকের সৃষ্টি বিষয়ক!
    প্রিয় ইভেন্ট অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড!