কিভাবে হলো আকাশ সৃষ্টি প্রিয় ইভেনেটের কনটেন্ট টি পড়েন; আরশ বহনকারী ফেরেশতা সৃষ্টির কাহিনী!
ইসলামিক জীবন পদ্ধতি!
আমাদের জীবন সুন্দর ও সহজ, পরকালে সফলতা পেতে অবশ্যই আল-কুরআন ও সুন্নাহ অনুশরণ করা আবশ্যক!
আরশ বহনকারী ফেরেশতা সৃষ্টি!
আরশ বহনকারী ফেরেশতা সৃষ্টি!
এরপর আল্লাহ্ পাক আরশের উপর আঠার সহস্র বুরুজ সৃষ্টি করেন এবং প্রত্যেক বরুজ আঠার সহস্র খুটির উপর স্থাপন করা হয়। প্রত্যেক খুঁটির ওপর আবার এক সহস্র ঝাড় তৈরি করা হয়। এক ঝাড় থেকে অন্য ঝাড় সাতশ' বছরের দূরত্বে অবস্থিত এবং প্রতিটি ঝাড়ে আঠার সহস্র বাতি স্থাপন করা হয়। প্রত্যেকটি বাতি এত বড় যে, সাত আসমান-যমীন এবং তদস্থ সব কিছু এমনভাবে তাতে সামাল হয়ে যাবে, যেন বৃহৎ বিস্তৃত মাঠের মাঝখানে একটি আঙ্গুল রেখে দেয়া হয়েছে। অতপর বৈচিত্র্যময় আকৃতির চার জন ফেরেশতা সৃষ্টি করা হয়। ওই চার ফেরেশতাকে আরশ ওঠানাের জন্য আদেশ দেয়া হয়। আদেশ পেয়ে তারা সর্বশক্তি দিয়ে আরশ উঠানাের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, হে ফেরেশতারা! আমি তােমাদেরকে সপ্ত আসমান যমীন এবং তদস্থ সবকিছুর শক্তি দান করছি। সুতরাং তােমরা আরশ উঠাও এ নির্দেশ পেয়ে তারা পুনঃ জোর প্রচেষ্টা চালিয়েও অক্ষম ও অপারগ থেকে যায়। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইরশাদ হল এ তসবীহ পড়ে উঠাও-
উচ্চারণ ঃ সুবহা-না যিল মুলকি ওয়াল মালাকূতি সুবহা-না যিল ই'যযাতি ওয়াল ‘আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কামা-লি ওয়াল জামা-লি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল জাবারূত, সুবহা-নাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাযী লা-ইয়ানা-মু ওয়ালা-ইয়ামূতু সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বনা-ওয়া রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররূহ।।
অর্থ ঃ আমি মহান সত্তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি বাদশাহ এবং ঊধ্ব জগতের কর্তা। আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার, যিনি সম্মান, মহত্ত্ব, মর্যাদা, কুদরত, পূর্ণতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, বুযুর্গী এবং গর্ব-অহংকারের মালিক। আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই বাদশাহর, যিনি নিদ্রা যান না, যিনি চিরঞ্জীব, তিনি অত্যন্ত পবিত্র, আমাদের, ফেরেশতাকুলের | এবং রূহসমূহের রব।
আরশ উঠানাের কাজে নিয়ােজিত ফেরেশতারা এ তসবীহ পাঠ করলে আল্লাহর কুদরতে উঠাতে সক্ষম হন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে অন্য এক বর্ণনায় আছে,। আরশ উত্তোলনকারী চার ফেরেশতা নিম্নের তসবীহ পড়ে আরশ তুলতে সক্ষম হন-
উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি অল হামদুলিল্লা-হি ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু আল্লা-হু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা-কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম ।
অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, প্রশংসা-স্তুতি করছি আল্লাহ পাকের যিনি ছাড়া আর কোন হুকুমকর্তা নেই, আল্লাহ অত্যন্ত বড়। মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ক্ষমতা ছাড়া কেউ কোন কিছুই করতে পারে না।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, এ তসবীহ পাঠ করা হলে আল্লাহ তাআলা বেহেশত এবং ফেরেশতাকুলকে সৃষ্টি করেন। যাতে ফেরেশতা আরশের চতুর্পাশ্বে ঘুরে তসবীহ পাঠ ও তওয়াফ করে মু'মিন বান্দাদের জন্য ক্ষমা কামনা করতে পারেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন ইরশাদ করেন-
উচ্চারণ : আল্লাযীনা ইয়াহমিলূনাল আরশা ওয়া মান হাওলাহূ ইউসাববিহূনা বিহামদি রব্বিহিম ওয়া ইয়াস,তাগফিরূনা লিল্লাযীনা আ-মানূ রব্বানা-ওয়াসিতা কুল্লা শাইয়ির রাহমাতাওঁ ওয়া ই’লমান ফাগফির লিল্লাযীনা তা-বু ওয়াত্তাবাউ' সাবীলিকা ওয়াকিহিম 'আযা-বাল জাহীম।
অর্থ : আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতা এবং যারা আরশের চতুর্পার্শ্বে উপস্থিত রয়েছে, তারা আপন রবের হামদ সহকারে তসবীহ করছে এবং তার প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং মু'মিনদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করছে, তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক আপনার রহমত ও এলেম দ্বারা কিছুকে ঘিরে রাখছেন। অতএব যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং দোযখের আযাব থেকে বাচান। (সূরা মু'মিনঃ আয়াত- ৭)
অতঃপর আরশে আজীমের নিচে মারওয়ারীদ পাথরের একটি দানা তৈরি হয়, তা হতে আল্লাহ পাক লওহে মাহফুজ সৃষ্টি করেন। লওহে মাহফুজের দৈর্ঘ সাতশ' এবং প্রস্থ তিনশ’ বছরের পথের দুরত্ব, চতুর্দিকে লাল ইয়াকুত পাথর দ্বারা জড়ানাে। লওহে মাহফুজ তৈরি শেষে কলমের প্রতি আল্লাহর আদেশ হয় লেখ- “আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টি সম্পর্কে তাঁর ইলম এবং কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত তার সৃষ্টিকুলে অণু পরিমাণ যে অস্তিত্ব লাভ করবে তার ই’লম। তখন লওহে মাহফুজে লিখিত হয়-
উচ্চারণ ঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আনাল্লা-হু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনা, মানিসতাসলামা বিক্বাদোয়া-ই ওয়া লাম ইয়াছবির ‘আলা-বালা-ঈ ওয়া ইয়াশকুরু "আলা-না মা-ঈ কাতাবতুহূ ওয়া বা আছতুহু মা‘আছ ছিদ্দীক্বীনা ইয়াক্বীনান ওয়া মান লাম ইয়ারদোয়া- বিকাদোয়া-ঈ ওয়া লাম ইয়াছবির ‘আলা-বালা-ঈ ওয়া লাম ইয়াশকুর আলা-নামা-ঈ ফালইয়াতলুব রব্বান সিওয়া-য়ী ওয়া ইয়াখরুজ মিন তাহতি সামা-ঈ।
অর্থঃ ও পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার নামে। আমিই সকলের হুকুমকর্তা আমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। যে আমার নির্ধারিত তাকদীরের ওপর সন্তুষ্ট এবং আমার দেয়া বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে আর আমার দেয়া নিয়ামতের ওপর শােকর গুজারি করে; আমি নিশ্চয়ই তাকে সিদ্দিকীনের অন্তর্ভুক্ত করব। আর যে আমার স্থিরিকৃত তাকদীরের প্রতি অসন্তুষ্ট। এবং আমার দেয়া বিপদাপদে অধৈর্য, আমার দেয়া নিয়ামতের শােকর গুজার করে না, তবে সে যেন আমি ছাড়া অপর কোন ইলাহ খুজে নেয় এবং আমার আকাশের নিচ থেকে অন্য কোথাও বের হয়ে যায়।
উল্লিখিত নির্দেশ বাণী লেখার পর আপনা থেকেই লওহে মাহফুজ নড়েচড়ে বলে উঠে-আমার ন্যায় কোন সৃষ্টর অস্তিত্ব নেই। কেননা, আমার শরীরে আল্লাহর ইলম লিখা। হয়েছে। তখন আল্লাহর তরফ থেকে ধ্বনি আসে-
يمحوا الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتب ۔
উচ্চারণ ঃ ইয়ামহূল্লা-হু মা-ইয়াশা-উ ওয়া ইউছবিতু ওয়া ইন্দাহূ উম্মুল কিতাব।
অর্থ : আল্লাহ্ পাক যা চান রাখেন এবং যা চান মিটিয়ে দেন, আর তার কাছেই রয়েছে আসল কিতাব।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক যা কিছু নির্ধারণ । করেছেন, তাতে কক্ষণাে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন হবে না।
কিন্তু হায়াত, মউত, রিয়িক ও সৌভাগ্যে-দুর্ভাগ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে পারে।
এর পর আরশের নিম্নস্থ মারওয়ারীদের উপর নির্দেশ হল-বিস্তৃত হও, তখন তা বিস্তৃত হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-وسع كرسيه السموات والأرض
উচ্চারণ ঃ (ওয়াসি'আ কুরসিয়ুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বোয়া)
অর্থঃ আসমান-যমীনব্যাপী তাঁর কুরসী বিস্তৃত। অতপর কুরসীর নিচে ইয়াকুতের একটি দানা তৈরি হয়। অনেকের মতে সেটি ইয়াকুত নয়; বরং তা মারওয়ারীদের দানা। পাচশ' বছরের রাস্তার সমপরিমাণ তার দৈর্ঘ প্রস্থ। সৃষ্টির পর আল্লাহ্ পাক যখন তার প্রতি দৃষ্টি দেন তখন তা। আল্লাহর ভয়ে আপনা থেকেই পানিতে পরিণত হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ্ পাক চতুর্মুখী বাতাস তৈরি করে হুকুম দিলেন-তােমরা পানির চতুর্দিকে ঢেউ সৃষ্টি করে ফেনা বের কর । হুকুম পেয়ে বাতাস তাই করল। অতঃপর আল্লাহর কুদরতে ধোয়াযুক্ত আগুন তৈরি হয়ে সে পানির উপর যায় এবং পানি থেকে ধোঁয়া বের হয়ে পানি ও কুরসীর মঝখানে বাতাসে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। পানি ও কুরসীর মাঝখানে ঝুলন্ত ধোয়াকে আল্লাহ্ সপ্তভাগে বিভক্ত করে পানি, লােহা, তামা, রূপা, সােনা, মারওয়ারীদ ও লাল ইয়াকুত সৃষ্টি করেন। এরপর সে পানির এক ভাগ দিয়ে প্রথম আসমান, তামা দিয়ে দ্বিতীয় আসমান, লােহা দিয়ে তৃতীয় আসমান, রূপা দিয়ে চতুর্থ আসমান, সােনা দিয়ে পঞ্চম আসমান, মারওয়ারী দিয়ে ষষ্ঠ আসমান আর লাল ইয়াকুত দিয়ে সপ্তম আসমান সৃষ্টি করেন এবং প্রতি আসমানের মাঝখানে পাঁচশ বছরের ব্যবধান রাখেন। এরপর আল্লাহ পাক আপন কুদরতে কুরসীর নিচে সৃষ্ট ইয়াকুত বা মারওয়ারীদ হতে সৃষ্ট পানিতে তৈরি এ ফেনা হতে লাল মাটির এক স্কুপ তৈরি করেন, বর্তমানে কাবা ঘর বিদ্যমান। জিবরাঈল, মীকাঈল, ইসরাফীল ও আযরাঈল (আ) ফেরেশতাকে সে লাল মাটি চার কোণে ছড়িয়ে দেয়ার হুকুম দেয়া হল তারা সে হুকুম পালন করেন আর যমীন সে লাল মাটির স্তুপ হতেই সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-
(খালাক্বাল আরদ্বোয়া ফী ইয়াওমাইনি )
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা যমীন সৃষ্টি করেছেন দুদিনে।।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক আসমানে এক নূর তৈরি করেছেন, সে নূর হতে অগণিত ফেরেশতা সৃষ্টি করেন। সেসব ফেরেশতার প্রতি সারাক্ষণ তসবীহ-তাহলীল পাঠ এবং আল্লাহ পাকের মহত্ত্ব ও পবিত্রতা বর্ণনা। করার হুকুম রয়েছে। তারা যদি এক পলকের জন্যও অমনােযােগী হয় তবে তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলার তাজাল্লীতে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সেসব ফেরেশতার কেউ গাভীর, কেউ সাপের এবং কেউ শকুনের আকৃতি। আবার কার কার দেহের উপরের অংশ বরফ এবং নিচের অংশ আগুনের তৈরি। এরা সকলেই নিম্নেলিখিত তসবীহ পাঠ করেন-
উচ্চারণ ঃ সুবহা-না মান আল্লাফা বাইনাছ ছালজি ওয়াননা-র।
অর্থঃ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই আল্লাহর, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন বরফ ও আগুন দিয়ে। না বরফ আগুন নিভাতে পারে আর না আগুন বরফ গলাতে পারে। এসব ফেরেশতার কেউ দাড়িয়ে, কেউ রুকুতে, কেউ সিজদায় কেউ বসে আল্লাহর তাসবীহ করছে। কিয়ামত পর্যন্ত তড়িত এভাবেই থাকবেন। কিয়ামতের দিনে এসব ফেরেশতার সকলেই অক্ষমতা ও অপারগতা প্রকাশ করে বলবে-
উচ্চারণ ঃ সুবহা-না মা-‘আবদানা-কা হাক্বক্বা ই’বা-দাতিকা
অথঃ (হে আমাদের প্রভু)! আমরা যথাযথভাবে আপনার ইবাদত করতে পারিনি।
অতঃপর আল্লাহ্ পাক সাত দিন সৃষ্টি করেন। অতঃপর সাত দিনের রবিবার আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের, সােমবার সাত তবক আসমান, মঙ্গলবার সাত তবক যমীন, বুধবার। আঁধার, বৃহস্পতিবার যমীনের কল্যাণ ও তদস্থ সব কিছু, শুক্রবার দিন চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করে এদিনই সাত আসমানে আলােড়ন সৃষ্টি করেছেন এবং সপ্তম দিন অবসর নিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন-
خلق السموات والأرض وما بينهما في ستة أيام -
উচ্চারণ : খালাকাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বোয়া ওয়ামা-বাইনাহুমা-ফী সিত্তাতি আইয়্যামিন। অর্থঃ (আল্লাহ্ তাআলা) আসমান যমীন ও তদস্থ সব কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন
উচ্চারণ ঃ ওয়া ইন্না ইয়াওমান ই'ন্দা রব্বিকা কাআলফি সানাতিম মিম্মা-তাউ'দদূন।
অর্থ ঃ তােমাদের প্রতিপালকের কাছে একদিন তােমাদের গণনানুযায়ী এক সহস্র বছরের সমান।
মূলঃ উর্দ্দূ কিতাবের সরল বঙ্গানুবাদ তাহের সুরাটী (ভারত)



1 মন্তব্যসমূহ
❤️❤️❤️
উত্তরমুছুনAssalamualaikum warahmatullahi wa barakatuhu!